বারাণসী ভ্রমন গাইড

বারাসী  
এস টি ডি কোড: ০৫৪২



ইতিহাস: 
রুনা ও অসি নদীর সম্গমস্থলে বরাণসী অবস্তিত। পৌরাণিক মতে বিশ্বের প্রাচীনতম শহর। বারাণসী শহর পত্তন করেন সুহোত্রের পুত্র কাস্য। তাই বারাণসীর অপর নাম কাশী।

কিংবদন্তি অনুসারে, শিব এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। হিন্দু মহাকাব্য মহাভারত-এর নায়ক পাণ্ডব ভ্রাতারা কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে ভ্রাতৃহত্যা ও ব্রহ্মহত্যাজনিত পাপ থেকে উদ্ধার পেতে শিবের খোঁজ করতে করতে এই শহরে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে, যে সাতটি শহর মোক্ষ প্রদান করতে পারে, সেগুলির একটি হল বারাণসী। বারাণসীতে যে সবচেয়ে পুরনো পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে, তার থেকে অনুমিত হয় গাঙ্গেয় উপত্যকায় এই শহরে জনবসতি ও বৈদিক ধর্ম ও দর্শন শিক্ষাকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়েছিল খ্রিস্টপূর্ব একাদশ কিংবা দ্বাদশ শতাব্দীতে। এই জন্য বারাণসীকে বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির একটি মনে করা হয়। বারাণসী একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে ওঠে। এই শহর মসলিন ও রেশমের বস্ত্র, সুগন্ধি দ্রব্য, হাতির দাঁতের কাজ ও ভাস্কর্য শিল্পের জন্য বিখ্যাত ছিল।

৫২৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বারাণসীর কাছে সারনাথে বুদ্ধ প্রথম বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেন। এই ঘটনা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস "ধর্মচক্রপ্রবর্তন" নামে পরিচিত। ৬৩৫ খ্রিস্টাব্দে চীনা পর্যটক ফা হিয়েন এই শহরে এসেছিলেন। তাঁর রচনা থেকে এই শহরের ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকাণ্ডের পরিচয় পাওয়া যায়। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে হিউয়েন সাং বারাণসীতে এসেছিলেন। তিনি এই শহরকে "পোলোনিসি" নামে উল্লেখ করেন এবং লেখেন এই শহরে ৩০টি মন্দির ছিল ও প্রায় ৩০ জন সন্ন্যাসী ছিলেন। অষ্টম শতাব্দীতে বারাণসীর ধর্মীয় গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই সময় আদি শঙ্কর শিব উপাসকদের বারাণসীর প্রধান সম্প্রদায় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

১১৯৪ সালে তুর্কি মুসলমান শাসক কুতুবুদ্দিন আইবক বারাণসী জয় করেন। তিনি এই শহরের প্রায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। মুসলমান রাজত্বে এই শহরের সমৃদ্ধি নষ্ট হয়েছিল। অবশ্য আফগান অনুপ্রবেশের পর ত্রয়োদশ শতাব্দীতে কিছু নতুন মন্দির নির্মিত হয়েছিল। ১৩৭৬ সালে ফিরোজ শাহ বারাণসী অঞ্চলের কিছু হিন্দু মন্দির ধ্বংস করার আদেশ দিয়েছিলেন। ১৪৯৬ সালে আফগান শাসন সিকন্দর লোদি এই অঞ্চলে হিন্দুদের প্রতি দমনপীড়ন নীতি বজায় রেখে অবশিষ্ট মন্দিরগুলির অধিকাংশই ধ্বংস করে দেন। মুসলমান শাসনের অবদমনের পরেও মধ্যযুগে বারাণসী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তার খ্যাতি হারায়নি। এর ফলে ধর্ম ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে এই শহরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে গিয়েছিল। ভক্তিবাদী আন্দোলনের বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি বারাণসীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কবীর। তিনি ১৩৯৮ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কবীরকে "পঞ্চদশ শতাব্দীর ভারতের শ্রেষ্ঠ ভক্তিবাদী সন্ত কবি ও অতিন্দ্রীয়বাদী" বলা হয়। বারাণসীর ভক্তি আন্দোলনের অপর একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন রবিদাস। তিনি ছিলেন পঞ্চদশ শতাব্দীরই এক ভক্তিবাদী ধর্মসংস্কারক, অতিন্দ্রীয়বাদী, কবি, পর্যটক ও ধর্মগুরু। তিনি বারাণসীতেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই শহরেরই এক চামড়ার কারখানায় তিনি কাজ করতেন। ভারত তথা দক্ষিণ এশিয়ার বহু বিশিষ্ট পণ্ডিত ও ধর্মপ্রচারক বারাণসীতে এসেছিলেন। ১৫০৭ সালের শিবরাত্রি উৎসবের সময় গুরু নানক এই শহরে আসেন। তাঁর এই বারাণসী সফর শিখধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

ষোড়শ শতাব্দীতে মুঘম সম্রাট আকবরের সময়কাল ছিল বারাণসীর সাংস্কৃতিক নবজাগরণের যুগ। আকবর শহরটি সাজিয়ে তোলেন। তিনি এই শহরে শিব ও বিষ্ণুর দুটি বিশাল মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন। পুণের রাজা অন্নপূর্ণা মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই যুগেই ২০০ মিটার (৬৬০ ফু) দীর্ঘ আকবরি সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়। ষোড়শ শতাব্দী থেকে পর্যটকেরা আবার এই শহরে আসা শুরু করেন। ১৬৬৫ সালে ফরাসি পর্যটক জ্যঁ ব্যপ্তিস্ত তাভার্নিয়ার এই শহরের গঙ্গাতীরবর্তী বিন্দু মহাদেব মন্দিরের স্থাপত্য সৌন্দর্যের কথা বর্ণনা করেন। শের শাহের আমলে কলকাতা থেকে পেশোয়ার পর্যন্ত রাস্তা নির্মিত হলে এই অঞ্চলের পরিবহণ পরিকাঠামোরও উন্নতি ঘটেছিল। উক্ত রাস্তাটিই ব্রিটিশ যুগে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড নামে পরিচিত হয়। ১৬৫৬ সালে আওরঙ্গজেব আবার এই শহরের বেশ কিছু মন্দির ধ্বংস করার এবং মসজিদ স্থাপনের আদেশ দেন। এর ফলে কিছু সময়ের জন্য আবার বারাণসীর সমৃদ্ধি নষ্ট হয়। যদিও আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর ভারতের অধিকাংশ অঞ্চলের শাসনভার হিন্দু ও হিন্দুদের প্রতি বন্ধুমনোভাবাপন্ন সামন্ত রাজাদের হাতে চলে যায়। আধুনিক বারাণসীর বেশিরভাগটাই রাজপুত ও মারাঠা রাজাদের হাতে তৈরি। অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাগুলির বেশিরভাগই বর্তমান রূপ পায়। ব্রিটিশ যুগে (১৭৭৫-১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ) কাশীর রাজাই এখানকার মুখ্য শাসক হয়ে ওঠেন। ১৭৩৭ সালে মুঘল সম্রাট কাশী রাজ্যকে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কাশীর রাজবংশ বারাণসী শাসন করেছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীতে মহম্মদ শাহ প্রচলিত পঞ্জিকার ভুলত্রুটি ধরার জন্য গঙ্গার তীরে একটি মানমন্দির তৈরির আদেশ দেন। এই মানমন্দিরটি বারাণসীর মানমন্দির ঘাটের পাশে অবস্থিত। অষ্টাদশ শতাব্দীতে আবার বেশ কিছু পর্যটক এই শহরে আসেন। ১৭৯১ সালে ব্রিটিশ গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ও জোনাথান ডানকান এই শহরে একটি সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করেন। ১৮৬৭ সালে গঠিত হয় বারাণসী মিউনিসিপ্যাল বোর্ড।

১৮৯৭ সালে বিশিষ্ট ভারতপ্রেমিক সাহিত্যিক মার্ক টোয়েইন বারাণসী দেখে লেখেন, "বারাণসী ইতিহাসের চেয়েও পুরনো, ঐতিহ্যের চেয়েও পুরনো, এমনকি কিংবদন্তির চেয়েও পুরনো। সব কিছুকে একত্রিক করলে যা দাঁড়ায় তার চেয়ে দ্বিগুণ পুরনো।" ১৯১০ সালে ব্রিটিশরা বারাণসীকে একটি রাজ্যে পরিণত করে। রামনগর ছিল এই রাজ্যের সদর। তবে বারাণসী শহর এই শহরের এক্তিয়ারে ছিল না। বারাণসীর পূর্বদিকে গঙ্গাতীরে রামনগর দুর্গে কাশীর রাজা এখনও বাস করেন। রামনগর দুর্গ ও জাদুঘরে কাশীর রাজাদের ইতিহাস রক্ষিত আছে। অষ্টাদশ শতাব্দী থেকেই কাশীর রাজা এখানে থাকেন। স্থানীয় মানুষেরা তাঁকে খুবই শ্রদ্ধা করে। তিনি এই অঞ্চলের ধর্মীয় প্রধান। বারাণসীর অধিবাসীরা তাঁকে শিবের অবতার মনে করে। তিনিই কাশীর সব ধর্মীয় উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহে ব্রিটিশ বাহিনী এখানে একদল বিদ্রোহী ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে। থিওসফির প্রচারে অ্যানি বেসান্ত এখানে এসেছিলেন। "সকল ধর্মের মানুষকে একই ভ্রাতৃত্ববোধে উদ্বুদ্ধ করতে এবং ভারতীয় সংস্কৃতির মূল্যবোধের প্রচার ভারতবাসীর মন থেকে সকল কুপ্রথা দূর করতে" তিনি এখানে সেন্ট্রাল হিন্দু কলেজ স্থাপন করেন। ১৯১৬ সালে এই কলেজটি কাশী হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়। ১৯৪৮ সালের ১৫ অক্টোবর কাশী ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।


কীভাবে যাবেন:
ট্রেন: দিল্লি, আগ্রা, লক্ষ্ণৌ, মুম্বাই কলকাতা সহ একাধিক শহর থেকেবারাণসী পৌঁছানোর সবচেয়ে সহজ উপায় ট্রেন বারাণসী জংশনের স্টেশন কোড: বি এস বি।  এখানে ক্লিক করুন বরাণসী আসার ও যাওয়ার ট্রেনের লাইভ লিস্ট পাবেন

বাসে: লখনউ (৮ ঘন্টা), এলাহাবাদ (৩ ঘন্টা), গোরাক্ষ পুর (৮ ঘন্টা) এবং কানপুর (৯ ঘন্টা) থেকে রাজ্য সরকার দ্বারা চালানো বাস আছে। বাসের সিট বুক করতে এখানে ক্লিক করুন

প্লেনে: বারাণসী বিমানবন্দর শহরের কেন্দ্র থেকে ২৫ কিমি দূরে অবস্থিত। দিল্লি, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, খাজুরাহ ও বিশাখাপত্তনমথেকে প্রতিদিন ছারে এয়ার ইন্ডিয়া, জেট কনেক্ট, স্পেস জেট এবং ইন্ডিগো। বিমানের সিট বুক করতে এখানে ক্লিক করুন

কোথায় থাকবেন:
পযর্টক ও তীর্থযাত্রীদের প্রিয় শহর বরাণসীতে পাবেন অতি সাধারণ লজ বা ধর্মশালা থেকে মাঝারি ও ভালো মানের হোটেল। ইউ পি ট্যুরিজমের রাহী ট্যুরিস্ট বাংলো (২২০৮৪১৩/৫৪৫) ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের  কাছে প্যারেড কঠিতে। পান্ডে ঘাটে অতি সাধারণ মানের বিষ্ণু রেস্ট হাউস (২৪৫০২০৬) এবং কালিকা গলিতে যোগি লজ (২৩৯২৫৮৮) এছাড়া  এখানে ক্লিক করুন বরাণসী হোটেলের লিস্ট পাবেন

কী দেখবেন: 
বারাণসীতে আপনার প্রথম দিন কাটবে স্থানীয় মন্দির  এবং গঙ্গার ঘাটগুলো ঘুরে। দ্বিতীয় দিন কাটবে বারাণসীকে কেন্দ্র করে অটো বা গাড়িতে দুটি পর্যায়ে সকাল ও দুপুরে খাওয়ার পর বেরিয়ে নেবেন রামনগর ও সারনাথ। তৃতীয় দিন গাড়িতে ঘুরবেন চুনার ও বিন্ধ্যাচল। বারাণসীর ম্যাপ দেখতে click here.

কাশীবিশ্বনাথ মন্দির
১. কাশীবিশ্বনাথ মন্দির: প্রাচীন মন্দির ধবংস হয়ে যাবার পর বর্তমান মন্দিরটি নির্মান করেন ইন্দোরের মহারানি অহল্যাবাঈ হোলকর (১৭৭৭) সাল। পাঞ্জাবের মহারাজা রঞ্জিত সিঙ প্রায় সাড়ে আটশো কেজি ওজনের সোনার পাতে মন্দিরের উপরের অংশ মুড়ে দেন। সংকীর্ণ গলিপথে মন্দিরে প্রবেশের সময় পান্ডারা আপনাকে ছেকে ধরবে। শুধুমাত্র দর্শন করাবার জন্য যে আপনি ২০ টাকার বেশি দিতে রাজি নন সে ব্যাপারে খোলাখুলি কথা বলে নেবেন। বিশ্বনাথ মন্দিরের সন্ধ্যারতি মনমুধ্যা  মনোমুগ্ধকর। বিশ্বনাথ মন্দিরের সন্ধ্যারতি সরাসরি দর্শন করতে এখানে ক্লিক করুন। মন্দিরের খোলা সময়: ভোর ৩.০০ টা এবং আরতি হায় ভোর ৩.০০ টা থেকে ৪.০০ টা পযন্ত।      

অন্নপূর্ণা মন্দির
২. অন্নপূর্ণা মন্দির: বাবা বিশ্বনাথের গলিতেই দেখবেন অন্নপূর্ণা মন্দির। পেশোয়া বাজিরাও ১৭২৫ সালে এই মন্দিরটি নির্মান করেন। কাশীর কাশীবিশ্বনাথ মন্দিরের গায়েই দেখবেন আওরঙ্গাজেবের তৈরি বিতর্কিত 'বেনীমাধব কা দারেরা ' নামে মসজিদ।  অন্নপূর্ণা মন্দিরের খোলা সময়: ভোর ৪.০০ টা থেকে সকাল ১১.৩০ পযন্ত এবং সন্ধা ৭.০০ টা থেকে রাত্রি ১১.০০ টা পযন্ত। আরতি হায় ভোর ৪.০০ টা।

৩. দূর্গা মন্দির: নগরী শেয়লিতে গড়া লাল রঙের মন্দিরটি অষ্টাদশ শতকের। গর্ভাগৃহে দেবীর বিগ্রহ খুব জাগ্রত। দূর্গা মন্দির খোলা সময়: সকাল ৭.০০ টা থেকে  রাত্রি ৮.০০ টা পযন্ত।

তুলসী মানস মন্দির
৪. তুলসী মানস মন্দির: দূর্গা মন্দির থেকে আরও কিছুটা এগিয়ে বা হাতে পড়ে রঙের সুবিশাল তুলসী মানস মন্দির। মন্দিরে শ্রীরামের বিগ্রহ ছাড়াও আকর্ষনীয় এখানকার দেওয়াল, যেখানে খোদাই করা আছে রামচরিতমানসের বিভিন্ন পদ। মন্দির খোলা সময়: সকাল ৫.৩০ থেকে  ও ৩.৩০ থেকে রাত্রি ৯.০০ টা পযন্ত।

নিউ  বিশ্বনাথ মন্দির
ভারত কলা ভাবন
৫. ভারত কলা ভাবন ও নিউ  বিশ্বনাথ মন্দির: পণ্ডিত মদনমোহন মঙ্গল কাব্যের সক্রিয় উদ্যোগে গড়া বেনারস ইউনিভার্সিটি কমপ্লেক্সেরমধ্যেই রয়েছে ভারত কলা ভাবন নাম মিউজিয়াম (মুধ্ল মিনিয়েচার পেন্টিং -এর সংগ্রহ দেখার মতো) এবং বিড়লাদের তেরি  সুউচ্চ নিউ বিশ্বনাথ মন্দির। এছাড়াও কাশীতে দর্শনীয় -
  1. সংকটমোচন মন্দির 
  2. হুন্ডিরাজ গণেশ মন্দির 
  3. বাবু শিবপ্রসাদ গুপ্ত নির্মিত ভারতমাতা মন্দির 
  4. কালভৈরব মন্দির 
  5. বিশালাক্ষী মন্দির 
  6. বিখ্যাত মানমন্দির 
  7. সংকটা দেবীর মন্দির। 
রিকশ করে সব কটা মন্দির দর্শন করতে পারেন।

দশাশ্বমেধ ঘাট
৬. ঘাট: বারানসীর মুখ্য আকর্সন গঙ্গা পারে আশির অধিক সুদৃশ্য ঘাটের সারি। ভোরবেলা সূর্য্যোদয়ের সময় হাজারো ভক্তের পুণ্যস্নান ও মাঙ্গলিক কর্মে জেগে ওঠে গঙ্গার ঘাট সহ সমগ্র বারাণসী। বারাণসীর ঘাটের স্বর্গীয় শোভা উপভোগ করতে হলে সকালের দিকে নৌকা ভাড়া করে দেখে নিন -
  1. দশাশ্বমেধ ঘাট, 
  2. মনিকর্নিকা ঘাট, 
  3. হরিশ্চন্দ্র ঘাট, 
  4. তুলসী ঘাট, 
  5. আসি ঘাট, 
  6. মানমন্দির ঘাট, 
  7. কেদার ঘাট, 


  8. রামনগর ফোর্ট
  9. পঞ্চগঙ্গা ঘাট, প্রভৃতি। 
আরও ৮৫ টি ঘাট দেখতে click here. বারানসীরম্যাপ দেখতে click here 
৭. রামনগর ফোর্ট ও মিউজিয়াম: গঙ্গার অপর পারে বারানসীর  অতীত রাজাদের দুর্গ তথা প্রাসাদের একাংশে গড়ে উঠেছে মিউজিয়াম। এখানে দেখবেন -
  1. রাজাদের ব্যবহত বিভিন্ন আমলের ঘোড়ার গাড়ি 
  2. পালকি 
  3. চৌদোলা 
  4. কারুকার্যমন্ডিত হাওদা 
  5. পোশাক পরিচ্ছদ 
  6. অভিনব ঘড়ি 
  7. প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র
  8. দুর্গের একটা অংশে দেখবেন রামনগরের বিখ্যাত রামলীলার কিছু দৃশ্যের  ফটোগ্রাফ।  
প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি গ্রীষ্মে হেঁটে পন্টুন ব্রিজ পেরিয়ে বা ফেরি নৌকায় (বছরভর) রামনগর যাওয়া যায়।মিউজিয়াম খোলা থাকে সকাল ৯টা থেকে ১২টা এবং ২টা থেকে ৫.৩০ মি। রামনগরের ম্যাপ দেখতে click here.

চৌখন্ডী স্তূপ
৮. সারনাথ: বারানসী থেকে মাত্র ১০ কিমি দূরে সারনাথের বৌদ্ধ ধর্মের উন্মেষ হয়েছিল। বোধগয়ায় 'বোধি' লাভের পর বুদ্ধদেব সরনাথে এসে এখানকার মৃগ উদ্যানে সবার প্রথমে ধর্মীয় উপদেশ দান করেন। বৌদ্ধদের কাছে এই ঘটনা 'মহাধর্মচক্র প্রবর্তন' নামে খ্যাত। প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি, বুদ্ধদেবের আমলে এই সুপ্রাচীন জনপদের নাম ছিল 'ঋষিপত্তন'। সারনাথ নামটা এসেছে সারঙ্গনাথ (সারঙ্গ শব্দের অর্থ মৃগ) থেকে। সরনাথে দেখবেন -
ধামেক স্তূপ
  1. সারঙ্গনাথেরশ্বর বা সঙ্ঘেশ্বর মহাদেব মন্দির 
  2. চৌখন্ডী স্তূপ: সারনাথের প্রবেশের পথেই বাদিকে এই বিশাল স্তূপকে ছোটখাটো টিলা বললেও অত্যুক্তি হায় না। সম্রাট অশোক ২৩৪ খ্রি: পূর্বাব্দে এখানে এসেছিলেন। উনি এই সুবিশাল স্তূপটি নির্মাণ করান। 
  3. ধামেক স্তূপ: সারনাথের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দ্রষ্টব্য চোঙ্গাকৃতি সাড়ে তেতাল্লিশ মিটার উচু ধামেক স্তূপ। ভূমির কাছে এই স্তূপের ব্যাস ২৮ মিটার এবং নিচের অংশে দেখবেন গুপ্তযুগের স্থাপত্য নিদর্শন। 
  4. মূলগন্ধকুটি বিহার: সারনাথের অপর আকর্ষণ মহাবোধি সোসাইটি নির্মিত এই আধুনিক বুদ্ধমন্দির। এখানে দেখবেন জাপানের অগ্রণী শিল্পী কসেত্সু নোসুর আঁকা
  5. মূলগন্ধকুটি বিহার 
  6.  অসাধারণ কিছু ফ্রেস্কো। আদিমুলগন্ধকুটি বিহারের ধাংসাবশেষ কিছু দূরে।  
  7. সারনাথ মিউজিয়াম: এই সরকারি সংগ্রহশালায় অসংখ্য বুদ্ধ ও বধিসত্ত্বের মূর্তির সংগ্রহ বিস্ময় উদ্রেক করে। এখানে প্রত্যক্ষ করুন বৌদ্ধ শিল্প ও ভাস্কর্যের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলো এবং অশোকস্তম্ভের ( আমাদের জাতীয় প্রতীক ) শীর্ষদেশের চারটে পরস্পর সংলগ্ন সিংহমূর্তি। শুক্রবার মিউজিয়াম বন্ধ থাকে। অন্য দিন খোলা থাকে সকাল ১০টা থেকে ৫টা। এই পবিত্র ভূমিতে একরাত কাটাতে চাইলে পাবেন পর্যটন বিভাগের-রাহী ট্যুরিস্ট বাংলো (০৫৮২-২৫৯৫৯৬৫)।  থাকতে পারেন জৈন পেয়ং গেস্ট হাউসে (২৫৯৫৬২১) বা আগরওয়াল পেয়ং গেস্ট হাউসে (২২১০০৭)। সরনাথের ম্যাপ দেখতে click here.  
৯. চুনার: বারাণসী থেকে ৩৫ কিমি দুরে চুনারের প্রধান আকর্ষণ গঙ্গার ধারে সুবিশাল দুর্গ। পুরানমতে বামন অবতারে ভগবান বিষ্ণু তার প্রথম চরণ স্থাপন করেন এখানকার পবিত্র ভূমিখন্ডে তাই এর নাম হয় চরনাদ্রি। উজ্জয়িনীর শাসক মহারাজা বিক্রমাদিত্যের ভাই ভতৃহরি এখানে কঠিন তপস্যা করার পর জীবন্ত সমাধি নিয়েছিলেন। চুনার দুর্গের ইতিহাসও সুপ্রাচীন। অনেক ঐতিহাসিকের মতে রাজা সহদেব ১০২৯ সালে বর্তমান দুর্গটি নির্মান করেন। রাজা সদেবের সাহসী কন্যা সোনহা বা সোনওয়ার সঙ্গে তত্কালীন
চুনার ফোর্ট
মাহবার মহারাজা আলহাখন্দের বিবাহস্থল হিসাবে নির্মিত ' 
সোনহা-মন্ডপ ' আজও দুর্গের প্রধান দ্রষ্টব্য। এই দুর্গের প্রথম নির্মাতা রাজা বিক্রমাদিত্য। সোনহা মন্ডপের পেছনে দেখবেন বিক্রমাদিত্যে ভাই ভতৃহরির সমাধি। প্রথম মুঘল সম্রাট বাবর ১৫২৫ সালে এই দুর্গের অধিকার নেন। মাঝে শেরশাহের হাতে চলে যাবার পর আকবর পুনরায় দুর্গ জয় করেন ১৫৭৪ সালে। এরপর টানা প্রায় দুশো বছর মোঘলদের অধীনে থাকার পর ১৭৭২-এ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দখল করে ঐতিহাসিক চুনার ফোর্ট। জনশ্রুতি আছে এই দুর্গ থেকে একটি ঐতিহাসিক গোপন সুরঙ্গ পথ গঙ্গায় নেমে গেছে। বর্তমানে ভারত সরকার এখানে গড়ে তুলেছে প্যাকের (প্রভিনশিয়াল আমর্ড কোর) ট্রেনিং সেন্টার। তাই কেবলমাত্র সোনহা মন্ডপ ও ভতৃহরির সমাধি ছাড়া দুর্গের অভ্যন্তরে সাধারন পর্যটকদের প্রবেশ অধিকার নেই। দুর্গ ছাড়াও চুনারে দেখবেন হজরত সুলেমানের দরগা,পাথার খোদাই শিল্পীদের কাজ ও প্রায় ২ কিমি দূরে দূর্গামন্দির ও কালীমন্দির। চুনারের ম্যাপ দেখতে click here

১০. বিন্ধ্যাচল: বারাণসী থেকে ৭০ কিমি দুরে ৫১ সতীপীঠের অন্যতম বিন্ধ্যাচলের প্রধান দ্রষ্টব্য বিন্ধ্যাবাসিনী মন্দির। এই স্থানে সতীর বাম পায়ের আঙুল পড়েছিল। পুরানমতে এই সেই স্থান যেখানে দেবী স্বহস্তে শুম্ভ নিশুম্ভকে বধ 
বিন্ধ্যাচল
করেন। 
বিন্ধ্যাচলের ম্যাপ দেখতে click here.

১১. অষ্টভুজা মন্দির: বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির থেকে ৩ কিমি দুরে বিন্ধ্যপবর্তের ওপর দেবী অষ্টভুজা (প্রকৃতপক্ষে দূর্গা) মন্দির। পুরানমতে যশোদার গর্ভজাত মহামায়াকে কংস দেবকীর অষ্টমগর্ভের সন্তান ভেবে আছাড় মারতে উদ্যত হলে, মহাহায়া আকাশবাণী শুনিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান। এর পর বর্তমান মন্দির স্থলে আবিভূত হয়ে ভগবতী দূর্গা রূপে এখানে সদা বিরাজমান। সংকীর্ণ গুহাপথে ভেতরে গিয়ে মূর্তি দর্শন করতে হয়। 

১২. কালীখোহ: বিন্ধ্যপবর্তের ওপরে একটা গুহার মধ্যে মাকালির জাগ্রত মুখ কালীখোহ নাম প্রসিদ্ধ। পূরণমতে রাক্ষসদের হাতে দেবতাদের লাঞ্ছিত হবার কথা শুনে এই স্থলে গৌরবর্ণা পার্বতী এত ক্রুদ্ধ হয়ে ওঠেন যে ওনার স্বর্ণ অঙ্গ কাজলের মতো কালো হয়ে যায় (দেবীর নাম তখন থেকে কালী)এখানেও দেবীর নাম কালী, চন্ডী ও চামুন্ডা। ধর্মপ্রাণ ভক্তরা পার্বত্যপথে বিন্ধ্যাবাসিনী অষ্টভুজা কালীখোহের মধ্যে মহাত্রিকোশ পরিক্রমা সম্পন্ন করেন। 

এছাড়াও বিন্ধ্যাচলে দর্শন করুন-

  1. সীতাকুণ্ড (একমতে বনবাসকালে সীতা এখনে স্নান করেছিলেন, ভিন্নমতে সীতার জলতৃষ্ণা মেটাতে লক্ষ্মণ বান মেরে এই কুণ্ড সৃষ্টি করেন)
  2. তারকেশ্বরনাথ মন্দির    
  3.  বুরনাথের মন্দির 
  4. নারদ ঘাট 
  5. গেরুয়াতালাও
  6. ক্ষেত্রপাল মন্দির 
  7. কামাখ্যাদেবী মন্দির 
  8. শিবখোহ 
  9. রাবণের তপস্থল 
  10. সক্ষীগোপল মন্দির 
  11. সংকটমোচন হনুমান মন্দির   
প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফোন নাম্বার-
শিবপ্রসাদ গুপ্ত হসপিটাল (২৩৩৩৭২৩), রামকৃষ্ণমিশন হসপিটাল (২৩২১৭২৭), মাতা আনান্দময়ী হসপিটাল (২৩১৩০১৩), মারোয়ারী হসপিটাল, ডি, এম-২৫০৮৫৮৫, এস,পি-২৫০২৬৪৪, ট্যুরিস্ট পুলিশ ২৫০৬৬৭০, ইউ, পি ট্যুরিজম অফিস-২২০৮১৬২/ ২২০৬৬৩৮, বাসস্ট্যান্ড-২২০৩৪৭৬, বারাণসী রেলওয়ে স্টেশন-১৩১, ১৩২, ১৩৩, মোগলসরাই জংশন-২৫৫৭০৩।  

Banaras Map

View Larger Map