দিল্লি
এস টি ডি কোডঃ ০১১
ইতিহাসঃ
Delhi Railway Station |
বর্তমানে সারা দেশ থেকে বিভিন্ন ভাষা ও জাতির
মানুষ দিল্লিতে এসে বসবাস শুরু করায় দিল্লি একটি বহুজাতিক মহানগরে পরিণত হয়েছে।
দ্রুত উন্নয়ন ও নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিবাসীদের গড় আয় তুলনামূলকভাবে বেশি
হওয়ায় বর্তমানে দিল্লির অবস্থার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। আজ দিল্লি ভারতের এক অতি
গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। দিল্লির - এ
গুগল ম্যাপ দেখতে click here.
কীভাবে যাবেনঃ
Delhi Railway Station |
ট্রেনঃ শিয়ালদহ বা হাওড়া থেকে দিল্লি যাবার
সরাসরি ট্রেনের মধ্যে পাবেন - পূর্বা এক্সঃ, রাজধানী এক্সঃ, জনতা এক্সঃ, কালকা মেল
। দিল্লি আসার ও যাওয়ার
ট্রেনের লিস্ট জন্য click here.
বাসেঃ আগ্রার ঈদগাহ বাসস্ট্যান্ড থেকে
দিল্লি যাবার অনেক বাস আছে । আগ্রা থেকে দিল্লির
দূরত্ব ২০৪ কিমি। বাসের সিট বুক করতে click here.
কোথায় থাকবেনঃ
দিল্লি যেহেতু ভারতের রাজধানী শহর সেহেতু এখানে
নানা ধরনের অসংখ্য হোটেল আছে। দিল্লিতে হোটেলের জন্য click here.
কী দেখবেনঃ
১. লাল কেল্লাঃ লাল কেল্লা খ্রিষ্টীয় সপ্তদশ শতাব্দীতে
প্রাচীর-বেষ্টিত পুরনো দিল্লি (অধুনা দিল্লি, ভারত) শহরে মুঘল সম্রাট শাহজাহান কর্তৃক নির্মিত
একটি দুর্গ। ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত এই দুর্গটি ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী। এরপর
ব্রিটিশ ভারতীয় সরকার মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে নির্বাসিত করলে ভারতের
রাজধানী কলকাতায় স্থানান্তরিত হয়। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশরা এই দুর্গটিকে একটি
সামরিক ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করত। বর্তমানে এটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র
এবং ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌমত্বের একটি শক্তিশালী প্রতীক: প্রতি বছর ভারতীয়
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লার লাহোরি গেট সংলগ্ন একটি
স্থানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে থাকেন। ২০০৭ সালে এই কেল্লাটি ইউনেস্কো বিশ্ব
ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নির্বাচিত হয়।
Red Fort Delhi |
লাল কেল্লায় বসবাসকারী শেষ মুঘল সম্রাট ছিলেন
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের ব্যর্থতার পর ১৭ সেপ্টেম্বর
দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর লাল কেল্লা পরিত্যাগ করেন। পরে তিনি ব্রিটিশ বন্দী
হিসেবে এই দুর্গে ফিরে আসেন। এখানেই ১৮৫৮ সালের ২৭ জানুয়ারি তাঁর বিচার শুরু হয়
এবং ৭ অক্টোবর তাঁকে নির্বাসন দণ্ড দেওয়া হয়। এরপর লাল কেল্লার কর্তৃত্ব ব্রিটিশ
ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। তারা এটিকে একটি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার
করতে থাকে। ১৯৪৫ সালে আজাদ হিন্দ ফৌজের পরাজয়ের পর লাল কেল্লাতেই যুদ্ধবন্দীদের
বিচার হয়। স্বাধীনতার পর থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই কেল্লাটি ছিল ভারতীয়
সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন।
লাল কেল্লার অলংকরণ ও শিল্পকর্ম অতি উচ্চমানের।
পারসিক, ইউরোপীয় ও ভারতীয়
শিল্পকলার সংমিশ্রণে সৃষ্ট এই অভিনব শিল্পকলা ব্যঞ্জনাময়,
বর্ণময় এবং স্বতন্ত্রতার দাবিদার। দিল্লির লাল
কেল্লা ভারতের সেই সকল স্থাপনাগুলির অন্যতম যার সঙ্গে ভারতীয় শিল্পের যোগ
ঐতিহাসিক সূত্রে গ্রথীত। স্থাপত্য সৌকর্যের বিচারেও এই দুর্গটি অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণে ১৯১৩ সালে লাল কেল্লা জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন স্থাপনা রূপে
ঘোষিত হয় এবং সরকার কেল্লার রক্ষণাবেক্ষণের ভার স্বহস্তে গ্রহণ করে।
দুর্গের প্রাচীর মসৃণ এবং দৃঢ়। দুর্গের দুটি
প্রধান দরজা – দিল্লি গেট ও লাহোর
গেট। লাহোর গেট হল প্রধান দরজা। এই গেট দিয়ে ঢুকলে একটি লম্বা আচ্ছাদিত বাজার পথ পড়ে।
এর নাম চট্টা চক। এই পথের দুদিকের দেওয়াল দোকানের মতো করে স্টল দিয়ে সাজানো।
চট্টা চক ধরে সোজা এলে উত্তর-দক্ষিণ পথ পাওয়া যায়। এই পথটি আসলে দুর্গের
পশ্চিমের সামরিক ক্ষেত্র ও পূর্বের রাজপ্রাসাদের সীমানা। এই পথের দক্ষিণ প্রান্তে
অবস্থিত দরজাটিই হল দিল্লি গেট। লাল
কেল্লা এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে
clik here
২. দিওয়ান-ই-আমঃ দিল্লি গেটের বাইরে একটি বড়ো মুক্তাঙ্গন
রয়েছে। এটি এককালে দিওয়ান-ই-আম-এর অঙ্গন রূপে ব্যবহৃত হত। এখানে ঝরোখা নামে একটি
অলংকৃত সিংহাসনে বসে সম্রাট জনসাধারণকে দর্শন দিতেন। এই স্তম্ভগুলি সোনায় চিত্রিত
ছিল এবং সোনা ও রুপোর রেলিং দিয়ে সাধারণকে সিংহাসনের থেকে পৃথক করে রাখা হত।
৩. দিওয়ান-ই-খাসঃ দিওয়ান-ই-খাস ছিল পুরোপুরি শ্বেতপাথরে মোড়া
একটি কক্ষ। এর স্তম্ভগুলি পুষ্পচিত্রে সজ্জিত ছিল। ভিতরের অলংকরণের কাজে ব্যবহৃত
হয়েছিল প্রায়-মহামূল্যবান ধাতুসমূহ।
৪. নহর-ই-বেহিস্তঃ সিংহাসনের পশ্চাতে ছিল সম্রাট পরিবারের নিজস্ব
কক্ষগুলি। এই কক্ষগুলি দুর্গের পূর্ব প্রান্ত ঘেঁষা দুটি কক্ষের সারির উপর অবস্থিত
ছিল। এই সারি দুটি উচ্চ বেদীর উপর অবস্থিত ছিল এবং কক্ষগুলি থেকে যমুনা নদীর দৃশ্য
দেখা যেত। কক্ষগুলি নহর-ই-বেহিস্ত (স্বর্গোদ্যানের জলধারা) নামে একটি নীরবিচ্ছিন্ন
জলধারা দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এই জলধারা প্রত্যেক কক্ষের মাঝ বরাবর
প্রসারিত ছিল। যমুনা নদী থেকে দুর্গের উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত শাহ বুর্জ নামে
একটি মিনারে জল টেনে তুলে এই জলধারাকে পুষ্ট করা হত। প্রাসাদটি নির্মিত হয়েছিল
কুরআনে বর্ণিত স্বর্গোদ্যানের অনুকরণে। প্রাসাদের ভিতরের গাত্রে "যদি
পৃথিবীতে কোথাও স্বর্গ থাকে তবে তা এখানেই, তা এখানেই, তা এখানেই" কথাটি উপর্যুপরি দেওয়ালে খোদিত
হয়েছিল। ইসলামি শিল্পকলা অনুযায়ী নির্মিত হলেও এই সব কক্ষে হিন্দু শিল্পকলার
প্রভাবও খুঁজে পাওয়া যায়। প্রাসাদ প্রাঙ্গনটিকে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম
শ্রেষ্ঠ নিদর্শন বলে মনে করা হয়।
৫. জেনানাঃ প্রাসাদের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত কক্ষদুটি ছিল
জেনানা বা মহিলাদের বাসস্থান। ছোটো কক্ষটির নাম মুমতাজ মহল (বর্তমানে একটি
সংগ্রহালয়) এবং অপরটির নাম রংমহল। রংমহল তার চাকচিক্যময় অলংকৃত সিলিং এবং
নহর-ই-বেহিস্ত-এর জলধারাপুষ্ট শ্বেতপাথরের জলাধারটির জন্য প্রসিদ্ধ।
Moti Masjid |
৭. হায়াত বক্স বাগঃ কেল্লার উত্তরে রয়েছে একটি আনুষ্ঠানিক উদ্যান।
এর নাম হায়াত বক্স বাগ বা জীবন প্রদায়ী উদ্যান।উদ্যানটি দুটি পরস্পরছেদী জলধারা
দ্বারা বিভক্ত। উত্তর-দক্ষিণ জলধারাটি দুই প্রান্তে দুটি কক্ষ রয়েছে। ১৮৪২ সালে
শেষ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর তৃতীয় কক্ষটি নির্মাণ করেন উদ্যানকেন্দ্রে দুই
জলধারার ছেদনস্থলের উপরে।
৮. কুতুব মিনারঃ কুতুব মিনার ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত একটি
স্তম্ভ বা মিনার, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ
ইটনির্মিত মিনার। এটি কুতুব কমপ্লেক্সের মধ্যে অবস্থিত,
প্রাচীন হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের পাথর দিয়ে
কুতুব কমপ্লেক্স এবং মিনারটি তৈরি করা হয়েছে। ভারতের প্রথম মুসলমান শাসক
কুতুবুদ্দিন আইবেকের আদেশে এর নির্মাণকাজ শুরু হয় ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দে তবে মিনারের
উপরের তলাগুলোর কাজ শেষ করেন ফিরোজ শাহ তুঘলক ১৩৮৬ খ্রিস্টাব্দে। ভারতীয়-মুসলিম
স্থাপত্যশৈলীর গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন বলে কুতুব মিনার বেশ
উল্লেখযোগ্য।
Kutub Minar |
কুতুব মিনার বিভিন্ন নলাকার শ্যাফট দিয়ে গঠিত যা
বারান্দা দ্বারা পৃথকীকৃত। মিনার লাল বেলেপাথর দিয়ে তৈরী যার আচ্ছাদন এর উপরে
কোরান এর আয়াত খোদাই করা। ভূমিকম্প এবং বজ্রপাত এর দরুণ মিনার এর কিছু ক্ষতি হ্য়
কিন্তু সেটি পুনরায় শাসকদের দ্বারা ঠিক করা হয়। ফিরোজ শাহ এর শাসনকালে,
মিনার এর দুই শীর্ষ তলা বাজ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়
কিন্তু তা ফিরোজ শাহ দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল। ১৫০৫ সালে,
একটি ভূমিকম্প প্রহত এবং এটি সিকান্দার লোদী
দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল। কুতুব মিনার এর দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে ২৫ ইঞ্চি একটি ঢাল আছে
যা "নিরাপদ সীমার মধ্যে" বিবেচিত হয়। কুতুব মিনার এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে clik
here
৯. লৌহ মিনারঃ চতুর্থ শতকে রাজা চন্দ্র বর্মার তৈরি।
১০. আলাই মিনারঃ কুতুবের ঠিক পাশেই আলাউদ্দিন খলজির তৈরি আসমাপ্ত
এই মিনারের উচ্চতা ২৪.৫ মিটার। নির্মাণ কাল ১২৯৬-১৩১৬ সাল।
১১. তুঘালকাবাদ দুর্গঃ কুতুব মিনার থেকে ৮ কিমি দূরে ১৩ টি গেট ও ১০.
১৫ মিটার প্রাচীরে ঘেরা ৬.৫ কিমি পরিধির একটি দুর্গ বানান সুলতান গিয়াস উদ্দিন
তুঘলক।
India Gate |
আগে রাজা পঞ্চম জর্জের একটি মূর্তি এই স্মৃতিসৌধের
ছাউনির নিচে ছিল। ছাউনির তলাটি এখন ফাঁকা। সেই মূর্তিটি অন্যান্য মূর্তির সঙ্গে
দিল্লির করোনেশন পার্কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাধীনতার পর ইন্ডিয়া গেটে
ভারতীয় সেনাবাহিনীর "অনামা সৈনিকদের সমাধি" হিসেবে পরিচিত "অমর
জওয়ান জ্যোতি" স্থাপিত হয়েছে। ইন্ডিয়া গেট এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে clik
here
Jantar Mantar Delhi |
১৪. লোটাস টেম্পলঃ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সাতটি প্রাসাদের
সর্বশেষটি হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশের বাহাই উপাসনালয়,
যেটিকে সবাই “লোটাস টেম্পল” নামে জানি। এটি ভারতের দিল্লীতে অবস্থিত। এটির
প্রতিটি নকশা স্বতন্ত্র ও বৈচিত্র্যময়।
এই উপাসনালয় সবচাইতে সুন্দর ফুল এবং পবিত্রতার
প্রতীক। পদ্মের অনুকরণে কল্পিত এবং নির্মিত, যা ভারতবর্ষে উপাসনার এক অপরূপ নিদর্শন। লোটাস
টেম্পল নয়টি বৃহৎ জলধার দ্বারা বেষ্টিত যেটি কিনা উপাসনালয়ের ভেতরের কক্ষ
প্রাকৃতিক নিয়মে ঠান্ডা রাখে। “নয়”
সংখ্যাটি এদের মতে ঐক্যের প্রতীক,
তাই এটি নয় পার্শ্ব বিশিষ্ট।
Lotus Temple |
১৫. জামা মসজিদঃ ভারতের সবথেকে বড় মসজিদ। মোঘল স্থাপত্যশৈলির এক
নিদর্শন এই মসজিদ ১৬৫৬ সালে তৈরি হয়। জামা
মসজিদ কে এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে
clik here
১৬. পার্লামেন্ট ভবনঃ যদিও নিরাপত্তার কারনে বাইরে থেকে দেখতে হবে তবু
এর আর্কিটেকচালার বিউটি দেখার মতো।
Humayun's Tomb |
হুমায়ুনের সমাধিসৌধ চত্বরে হুমায়ুনের সমাধি
ছাড়াও রয়েছে তাঁর পত্নী হামিদা বেগম এবং পরবর্তীকালের মুঘল সম্রাট শাহজাহানের
পুত্র দারাশিকোর সমাধিস্থলও। এছাড়া রয়েছে জাহান্দর শাহ,
ফারুকশিয়ার, রফি উল-দৌলত ও দ্বিতীয় আলমগির প্রমুখ
পরবর্তীকালের মুঘল শাসকদের সমাধিও। এই সমাধিসৌধে মুঘল স্থাপত্যশৈলীর এক বিশেষ
উত্তরণ ঘটেছে। সমাধি চত্বরের চারবাগ গার্ডেন পারসিক বাগিচার একটি উদাহরণ,
যা ভারতে পূর্বে কখনও দেখা যায়নি। কাবুলে
(আফগানিস্তান) বাগ-ই-বাবর নামে পরিচিত মুঘল সম্রাট বাবরের যে সমাধিসৌধটি রয়েছে,
তা তুলনামূলকভাবে সাদামাটা। হুমায়ুনের ক্ষেত্রে
সেই ধরনের সাধারণ সমাধিসৌধ নির্মিত হয়নি। যদিও নন্দনকানন-প্রতিম উদ্যানে রাজকীয়
সমাধি নির্মাণ বাবরের ক্ষেত্রেই প্রথম দেখা যায়। হুমায়ুনের সমাধিসৌধটি সমরকন্দে
অবস্থিত তাঁর পূর্বপুরুষ তথা এশিয়াবিজয়ী তৈমুরের সমাধি গুর-ই আমির-এর আদলে
নির্মিত। এই সমাধিসৌধ আগ্রার তাজমহল সহ একাধিক সুরম্য রাজকীয় মুঘল স্থাপত্য
নিদর্শনের পূর্বসূরি।
হুমায়ুনের সমাধিটি যমুনা নদীর তীরে নির্মিত হয়।
কারণ এই জায়গাটি ছিল দিল্লির সুফি সন্ত নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সমাধিস্থল
নিজামুদ্দিন দরগার নিকটবর্তী। দিল্লির শাসকেরা এই সুফি সন্তকে অত্যন্ত সম্মান
করতেন। এঁর বাসভবন চিল্লা
নিজামুদ্দিন আউলিয়া হুমায়ুনের সমাধিস্থলের ঠিক উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। মুঘল
শাসনের শেষ পর্বে, ১৮৫৭ সালের
মহাবিদ্রোহের সময় শেষ মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ তাঁর তিন পুত্রকে নিয়ে
এখানে আশ্রয় নেন। পরে ক্যাপ্টেন হডসন তাঁকে বন্দী করেন এবং বিচারের পর তাঁকে
রেঙ্গুনে নির্বাসিত করা হয়। দাস রাজবংশের শাসনকালে এই জায়গাটি নাসিরুদ্দিনের
(১২৬৮-৮৭) পুত্র সুলতান কায়কোবাদের রাজধানী কিলোখেরি দুর্গের অন্তর্গত ছিল।
হুমায়ুনের মৃত্যু হয় ১৫৫৬ সালের ২০ জানুয়ারি।
তাঁর দেহ প্রথমে দিল্লিতে তাঁর রাজপ্রাসাদেই সমাহিত করা হয়। পরে খঞ্জর বেগ এটিকে
নিয়ে যান পাঞ্জাবের সিরহিন্দে। সেখানে ১৫৫৮ সালে হুমায়ুনের পুত্র তথা তদনীন্তন
মুঘল সম্রাট আকবর এটি দেখেন। পরে ১৫৭১ সালে হুমায়ুনের সমাধিসৌধের কাজ সমাপ্ত হলে
আকবর এটির পরিদর্শনে এসেছিলেন।
হুমায়ুনের বিধবা পত্নী হামিদা বানু বেগমের
নির্দেশে ১৫৬৫ সালে হুমায়ুনের মৃত্যুর নয় বছর পরে এই সমাধিসৌধ নির্মাণের কাজ
শুরু হয়। নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৫৭২ সালে। সৌধটি নির্মাণ করতে সেযুগে খরচ হয়েছিল
১৫ লক্ষ টাকা। মনে রাখা দরকার, এই
হামিদা বানু বেগম ও হুমায়ুনের প্রথমা পত্নী হাজি বেগম এক ব্যক্তি নন। আইন-ই-আকবরি
অনুসারে, জনৈকা হাজি বেগম
জীবনের শেষ পর্বে এই সমাধির তদারকি করতেন। তিনি ছিলেন হুমায়ুনের মামাতো বোন।
যে অল্প কয়েকজন সমসাময়িক ঐতিহাসিক এই সৌধের
উল্লেখ করেছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম আবদ আল-কাদির বাদাউনি। তিনি লিখেছেন,
সৌধটির নকশা প্রস্তুত করেন পারসিক স্থপতি মিরাক
মির্জা গিয়াস (যিনি মিরাক গিয়াসুদ্দিন নামেও পরিচিত)। তাঁকে হেরাত (উত্তর-পশ্চিম
আফগানিস্তান]] থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। ইতঃপূর্বে তিনি হেরাত,
বুখারা (অধুনা উজবেকিস্তান) ও ভারতের অন্যান্য
অংশে অনেকগুলি ভবন নির্মাণ করেন। তবে নির্মাণকার্য শেষ হওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু
হয় এবং তাঁর পুত্র সৈয়দ মুহাম্মদ ইবন মিরাক গিয়াথুদ্দিন পিতার অসমাপ্ত কাজ
সমাপ্ত করেন। হুমায়ুনের
সমাধিসৌধ কে এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে
clik here
১৮. জাতীয় রেল মিউজিয়ামঃ ভারতীয় রেলের একাল – সেকালের নানা জিনিস এখানে
প্রদর্শিত।
দিল্লিতে এগুলি ছাড়াও দেখার হল –
- অক্ষয় ধাম মন্দির
- ইসকন মন্দির
- পুরানো কেল্লা কে এখান থেকে সরাসরি দর্শান করতে clik here
- সফদরজং টাওয়ার
- রাষ্ট্রপতি ভবন
- শক্তিস্থল
- বীরভুমি
- শান্তিবন
- রাজঘাট
- লোধি টুম্ব
- অহিংসা স্থল।
দিল্লিতে এসব জিনিস ব্যক্তিগতভাবে ঘোরা ও দেখা
মুশকিল। এজন্য দিল্লি ট্যুরিজমের কন্ডাকটেড ট্যুরে অংশ নেওয়া ভালো। যোগাযোগের ফোন
নম্বর- ৬৫৩৯০০০৯, ২৩৩৬৩০৭।
প্রয়োজনীয় তথ্য ও ফোন নম্বরঃ
অ্যাপোলো হসপিটাল – ২৬৯২৫৮৫৮, পুলিশ –
১০০/২৩৩৭৮৮৮৮।
তথ্যসূত্রঃ Wikipedia
_________________________________
দিল্লি ভ্রমণের গল্প ১ (সোহরাব চৌধুরী
সজল)
দিল্লি ভ্রমণের গল্প 2 (মাহবুব আবদুল্লাহ)
দিল্লি ভ্রমণের গল্প 3 (লিয়াকত হোসেন খোকন)
No comments:
Post a Comment